Advertisements


যে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় ১ দিনেই ৩ লক্ষের অধিক মানুষের মৃত্য ঘটায়- বিশ্ব রেকর্ড

প্রাণঘাতী ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের

যে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় ১ দিনেই ৩ লক্ষের অধিক মানুষের মৃত্য ঘটায়- বিশ্ব রেকর্ড

১৯৭০ সালে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এর দক্ষিণ উপকূলে আছড়ে পড়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী “ভোলা” ঘূর্ণিঝড়। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে মুহুর্তের মধ্যে লন্ডভন্ড করে দেয় বাংলার দক্ষিণ উপকূল। 

এতে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। যা ইতিহাসে একে সর্বাধিক প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। এটিই সংরক্ষিত ইতিহাসে  কোন একক ঘূর্ণিঝড়ে সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটায়।

১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের বৃত্তান্ত

গঠন: ৭ই নভেম্বর, ১৯৭০
বিলুপ্তি: ১৩ই নভেম্বর, ১৯৭০
সর্বোচ্চ গতি (৩-মিনিট স্থিতি): 185 কিমি/ঘন্টা (115 মাইল/ঘন্টা)-IMD
সর্বোচ্চ গতি (১-মিনিট স্থিতি): 240 কিমি/ঘন্টা (130 মাইল/ঘন্টা)-JTWC
সর্বনিম্ন চাপ: 966 মিলিবার (hPa); 28.53 ইঞ্চি পারদস্তম্ভ


হতাহত: ৩০০,০০০–৫০০,০০০ (ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে প্রানঘাতীর রেকর্ড)
ক্ষয়ক্ষতি: $86.4 মিলিয়ন (১৯৭০ USD)

➡ Follow us on Google News feed for daily Latest Updates

ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবিত অঞ্চল: ভারতের পূর্ব অংশ ও পূর্ব পাকিস্তান 

১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড় ছিল একটি শক্তিশালী ক্রান্তীয় প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়। যা ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ-এর) দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। 

এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়। এবং এটি সর্বকালের সবচেয়ে ভঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি। এ ঝড়ের কারণে প্রায় ৩-৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। যার অধিকাংশই গাঙ্গেয় বদ্বীপের সমুদ্র সমতলের ভূমিতে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান।

এটি ১৯৭০-এর উত্তর ভারত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের ৬ষ্ঠ ঘূর্ণিঝড় এবং মৌসুমের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ছিল। আইএমডি অনুযায়ী এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ছিলো। সেইসাথে, জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার অনুযায়ী হারিকেন স্কেলে ‘ক্যাটাগরি ৪’ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল।

১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ:

ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে ৮ই নভেম্বর সৃষ্ট হয়। এটি ক্রমশ শক্তিশালী হতে হতে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ই নভেম্বর আইএমডি(IMD) অনুযায়ী এটির গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘন্টায় ১৮৫ কিমি (১১৫ মাইল) এ পৌঁছায়। এটি সে রাতেই বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এর) ভোলা উপকূলে আঘাত করে।

১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথঃ উইকিপেডিয়াপ্রাণঘাতী ঘূর্ণীঝড় ভোলা

ভোলা সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতি:

জলোচ্ছ্বাসের কারনে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। এতে ঐসব এলাকার বাড়ি-ঘর, গ্রাম ও শস্য স্রোতে তলিয়ে যায়।  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ছিল ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন উপজেলা। সেখানে ১৬৭০০০ জন অধিবাসীর মধ্যে ৭৭০০০ জনই (৪৬%) প্রাণ হারায়।

Read also: The Deadliest Cyclone That Killed Above 300k People in a Single Day

মুক্তিযুদ্ধে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব: 

ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর প্রতি পাকিস্তান সরকার অনেক নিষ্ঠুর আচরণ করে। সরকারের এমন নিষ্ঠুরতা দেখে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

২৪শে নভেম্বর এক সভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তোলেন। তখন অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন।

একই সময় তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রাদেশিকভাবে জয়লাভ করে। এবং ঘটনাপ্রবাহে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি প্রাকৃতিক ঘটনা একটি দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাণঘাতী ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতিঃ

আজও সেইদিনের বেচেঁ থাকা মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে আছে ভয়াবহ ভোলা ঘূর্ণিঝড়। আজও সেইদিনের কথা মনে পড়লে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। রাতে আর ঘুম আসেনা, গা শিউরে ওঠে!!

আমরা মহান আল্লাহর কাছে এই দোআা করি তিনি যেনো সেই দূর্যোগে নিহত মানুষদের জান্নাত দান করেন।
ধন্যবাদ : Bangladesh Weather Observation Team- BWOT

Advertisements


Advertisements