বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা (আপডেটেড) । ২২-২৫ মে ২০২৪
দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণাবর্তটি সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে সরে এসে একই এলাকায় অবস্থান করেছে এবং ইতোমধ্যে এটি একটি ক্রান্তীয় ঝড়ের পূর্বাভাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যেটি আজকে থেকেই সাসপেক্ট ৯৯-বি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা আগামীকাল ২২মে নাগাদ লঘুচাপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ক্রমান্বয়ে এটি উত্তর পূর্বে মুভ করতে পারে এবং আগামী ২৪/২৫ মে নাগাদ ঘূর্ণিঝড় “রেমাল” এ উন্নীত হতে পারে। ফরমেশন মোটামুটি একটা অবস্থানে চলে আসতে শুরু করেছে এবং আগামীকাল নাগাদ এটি আরো ঘনীভূত হলে এর শক্তিমত্তা ও ল্যান্ডফল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে। ইতোমধ্যে এর গতিবিধি পর্যালোচনা করে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা হল, এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রমের আশঙ্কা তৈরী করেছে। ভারতের ওডিসা রাজ্য থেকে শুরু করে মায়ানমারের সিত্তিই, এই রেঞ্জের যেকোন স্থান থেকে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে তবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকতে পারে সাতক্ষীরা থেকে চট্রগ্রামের উপকূলভাগ।
তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এটি অনেক বেশী তীব্রতা সম্পন্ন তথা সুপার সাইক্লোনে রুপ নিতে পারবেনা। এর পরিবর্তে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৫ থেকে ১৩৫ কি.মি. প্রতি ঘন্টায় থাকতে পারে। এর সর্বোচ্চ শক্তি উপকূলভাগ অতিক্রম করার সময় পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগের আপডেট দেখুনঃ সাগরে ঘূর্নিঝড়ের আশঙ্কা । ২১-২৫ মে ২০২৪
কোথায় আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশীঃ
১। সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার এ সম্ভাবনা থাকবে শতকরা ৬৫ ভাগ
২। ওডিসার উত্তর থেকে পশ্চিম বঙ্গ পর্যন্ত সম্ভাবনা ২৫ ভাগ
৩। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শতকরা ১০ ভাগ
বাংলাদেশে সম্ভ্যাব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব
সম্ভাবনা-১: যদি এটি বাংলাদেশের পশ্চিমে তথা কোলকাতা থেকে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে তবে সিস্টেমের ডান প্বার্শ তথা খুলনা ও বরিশাল এর উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েকফুট জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। এবং প্রায় সারাদেশেই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে।
সম্ভাবনা-২: যদি এটি ওডিসা থেকে কোলকাতার আশেপাশে ল্যান্ডফল করে তবে এর একটা আউটার কনভারজেন্স জোন চট্রগ্রাম ও বরিশালে ভালো বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে, অপরদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারনে একটা দূর্বল কনভার্জেন্স অঞ্চল সারাদেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে, যার ফলে বর্ষাকালের মত টিপ টিপ বৃষ্টি লক্ষ্য করা যেতে পারে প্রায় সারাদেশেই।
সম্ভাবনা-৩ঃ যদি এটি বরিশাল-চট্রগ্রাম এর মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে ল্যান্ডফল করে তবে বরিশাল ও চট্রগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি সারদেশেই ভালো বৃষ্টিপাত পেতে পারে, যদিও রংপুর এ কিছুটা কম।
সম্ভাবনা-৪ঃ যদি চট্রগ্রাম থেকে টেকনাফের মাঝে দিয়ে অতিক্রম করে তবে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পুরো চট্রগ্রাম বিভাগ বৃষ্টিপাতের সম্মূখীন হতে পারে।
সম্ভাবনা-৫ঃ যদি এটি মায়ানমারে যায় তবে একমাত্র চট্রগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল ব্যাতীত অন্যত্র বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সিস্টেম যত বেশী শক্তিশালী হয় তত এটি কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হয়ে আশে যার ফলে মেঘ এর ব্যাসার্ধ কমে যায়। অপরদিকে যত কম শক্তিশালী হয় মেঘ তত দূরে ছড়ানো ছিটানো থাকে যা একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। আমাদের ধারনা মতে এটি সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে পারে তবে প্রকৃতপক্ষে গতিবেগ আরো কম হওয়ার কথা। তাই মেঘ কিছুটা বিস্তৃত অঞ্চল জুড়েই থাকতে পারে।
এই সব কারনে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করলে পুরো দেশই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত এর মুখোমুখি হবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। বিডব্লিওটি তাই এসময়ে একটি সাইক্লোনিক বৃষ্টিবলয় ঘোষনা করবে যা সিস্টেম সুগঠিত হলে জানিয়ে দেয়া হবে, ইন শা আল্লাহ।
গরমঃ সিস্টেম সুগঠিত হয়ে গেলে ল্যান্ড-সী ব্রীজ বন্ধ হয়ে যাবে, তাই ২৩ মে এর পর থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তীব্র ভ্যাপসা গরম অনূভূত হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা অনুযায়ী জেলেদের জন্য সতর্কতা !!
২৪/২৫ তারিখ থেকেই উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়া শুরু করতে পারে, তাই এসময় এর পর থেকে সাগরে অবস্থান করা অনিরাপদ। তাই সমুদ্রগামী ট্রলার ও পর্যটকবাহী বোটগুলোকে বিএমডি ঘোষিত সতর্কতা সংকেত অনুসরণ করে নিরাপদ অবস্থান গ্রহণ করার জন্য আমরা শক্ত অনুরোধ করছি।
ধন্যবাদান্তে,
মোঃ খালিদ হোসাইন
প্রধান আবহাওয়া গবেষক
Bangladesh Weather Observation Team (BWOT)
বিঃ দ্রঃ
ছবিটি তৈরী করেছেনঃ মশিয়ার রহমান জনি, টিম ম্যানেজার, বিডব্লিউওটি
সার্বিক সহযোগিতায়ঃ রিসার্চ টিম, বিডব্লিউওটি
Advertisements