
ধেঁয়ে আসছে দেশের দিকে বেশ শক্তিশালী মৌসুমি ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি বলয় “নির্ঝর”
এটি একটি আংশিক বৃষ্টি বলয়, মানে এই বৃষ্টি বলয়ে দেশের বেশ কিছু এলাকা বৃষ্টিহীন থাকতে পারে।
এবং এই বৃষ্টি বলয়ে দেশের ৬০ শতাংশ এলাকায় কম বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
এটি চলতি বছরের ৭ তম বৃষ্টি বলয় ও তৃতীয় মৌসূমী বৃষ্টি বলয়, যা আগামী ২৮ শে জুন দেশের উপকূলীয় এলাকা হয়ে শুরু হয়ে আগামী ৫ ই জুলাই রাজশাহী বিভাগ হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে।
কোথায় কেমন সক্রিয় হতে পারে?
সর্বাধিক সক্রিয়ঃ দেশের সমগ্র উপকূলীয় এলাকা।
বেশ সক্রিয় : বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগ
মাঝারি সক্রিয়: সিলেট বিভাগ
হালকা থেকে মাঝারি সক্রিয় : রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ।
নাম : প্রায় শক্তিশালী বৃষ্টি বলয় নির্ঝর
কভারেজ টাইপ : আংশিক বৃষ্টি বলয়।
ক্যাটাগরি: ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি বলয় [বেশি সক্রিয় এলাকায়]
কাভারেজ : দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা।
ধরন : মৌসূমী বৃষ্টি বলয়
সময়কাল : ২৮ শে জুন হতে ৫ ই জুলাই পর্যন্ত।
সর্বাধিক সক্রিয়: ২৮ শে জুন টু ৩০ জুন ও ৩-৫ জুলাই
[এ সময় বেশি সক্রিয় এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাত দেখা যেতে পারে ]
বৃষ্টি বলয় নির্ঝর সম্পর্কে আরো বিস্তারিত!
কালবৈশাখী : নেই
বজ্রপাত : অপেক্ষাকৃত কম [শেষের দিকে বাড়তে পারে]
বন্যা : নেই
একটানা বর্ষন : আছে উপকূলীয় এলাকায়। [বেশিরভাগ মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত]
সিস্টেম : একটি মৌসূমী সিস্টেম আছে।
ঝড় : এই বৃষ্টি বলয়ে দেশের উপর বড় কোন ঝড়ের সম্ভাবনা নেই তবে উপকূলীয় এলাকায় লঘুচাপের প্রভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
সাগর : বেশিরভাগ সময়েই কিছুটা উত্তাল থাকতে পারে বায়ুচাপের তারতম্যের কারনে। তাই আপনারা এই সময়ে ঝুঁকি এড়াতে ছোট নৌজান নিয়ে মাছ ধরতে সাগরে নামবে না দয়াকরে।
পাহাড় ধসঃ এসময় চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকাতে পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি আছে। [বেশি সম্ভাবনা কক্সবাজার বান্দরবান এলাকায়]
বৃষ্টি বলয় নির্ঝরে মেঘমালার অবস্থা
নোট : বৃষ্টিবলয় নির্ঝর চলাকালীন সময়ে দেশের আকাশ অধিকাংশ এলাকায় আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। ও অধিক সক্রিয় এলাকায় মেঘলা থাকতে পারে, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে।
“নির্ঝর” এ বেশি সক্রিয় এলাকায় অধিকাংশ বৃষ্টিপাত হতেপারে একটানা ও দীর্ঘস্থায়ী। [উপকূলীয় এলাকায়]
এবং কম সক্রিয় এলাকায় বিক্ষিপ্ত প্রকৃতির ঝাকে ঝাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সল্প স্থায়ী বৃষ্টি হতে পারে [মধ্য ও উত্তর অঞ্চলে ]
*এই বৃষ্টি বলয় চলাকালীন সময়ে দেশের প্রায় ৩০-৪৫% এলাকায় পানি সেচের চাহিদা পুরন হতে পারে।
ভ্যাপসা গরম এবং মেঘের অভিমুখ
বৃষ্টিবলয় নির্ঝর চলাকালীন সময়ে দেশের আবহাওয়া অধিকাংশ এলাকায় আরামদায়ক থাকতে পারে, তবে বৃষ্টি বিরতির সময় অল্প কিছুটা ভ্যপসা গরম পড়তে পারে কিছু কিছু এলাকায়। [মূলত মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে]
নির্ঝর চলাকালীন সময়ে বেশি সক্রিয় স্থানে রোদের উপস্থিতি তেমন পাওয়া যাবেনা ইনশাআল্লাহ। তবে কম সক্রিয় এলাকায় রোদ মেঘের খেলা চলতে পারে।
মেঘের অভিমুখ: অধিকাংশ এলাকায় দক্ষিণ হতে উত্তর দিকে। তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকায় গতিপথ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন, উপকূলে দক্ষিণ পশ্চিম হতে উত্তর পূর্ব দিকে এবং উত্তরাঞ্চলে দক্ষিণ পূর্ব থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে।
বজ্রপাত ও বৃষ্টিবলয় নির্ঝরের সক্রিয়তার পর্যায়
বজ্রপাতঃ এই বৃষ্টি বলয়ে দেশের অধিকাংশ এলাকায় অল্প বজ্রপাত হতে পারে। বৃষ্টি বলয়ের অনেকাংশে বজ্রপাত মুক্ত থাকতে পারে। তবে শেষ দিকে বজ্রপাত বাড়তে পারে।
বৃষ্টি বলয় নির্ঝর এর সক্রিয়তার পর্যায়: ২৮ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত এটি মূলত দেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং খুলনা বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি সক্রিয়তা প্রদর্শন করতে পারে এবং অন্যত্র সক্রিয়তা কম ও কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। এবং ১-২ তারিখে উপকূলে মাঝারি ধরনের সক্রিয় এবং সারা দেশেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে।
৩-৫ তারিখে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আবার বেশি সক্রিয় এবং সারাদেশেই মোটামুটি কিছুটা সক্রিয়তা প্রদর্শন করতে পারে।
বৃষ্টি বলয় নির্ঝরে কোথায় কেমন বৃষ্টি হতে পারে দেখে নিন
আসুন একনজরে দেখেনেই বৃষ্টি বলয় নির্ঝর চলাকালীন সময়ে দেশের কোন বিভাগে গড়ে কত মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ও বৃষ্টি বলয়ের ৮ দিনে কোন বিভাগে গড়ে কত দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
বিভাগীয় গড়,
বরিশাল ২০০ মিলিমিটার গড়ে ৮ দিন
খুলনা ১৫৫ মিলিমিটার গড়ে ৭ দিন
চট্টগ্রাম ১৬০ মিলিমিটার গড়ে ৭ দিন
সিলেট ১০৫ মিলিমিটার গড়ে ৫ দিন
ঢাকা ৭০ মিলিমিটার গড়ে ৪ দিন
রাজশাহী ৫০ মিলিমিটার গড়ে ৪ দিন
রংপুর ৬০ মিলিমিটার গড়ে ৩ দিন ও
ময়মনসিংহ ৬৫ মিলিমিটার গড়ে ৪ দিন
আসুন একনজরে দেখে নেই, বৃষ্টি নির্ঝর চলাকালীন সময়ে আপনার জেলায় গড়ে কত মিলিমিটার বৃষ্টি হতেপারে।
বরিশাল বিভাগ:
———————-
বরিশাল – ১৪০
ভোলা উত্তর – ২০৫
ভোলা দক্ষিণ – ২৫০
বরগুনা – ২৫০
ঝালকাঠি – ১৬০
পটুয়াখালী উত্তর – ২০০
পটুয়াখালী দক্ষিণ – ২৫০
পিরোজপুর উত্তর – ১৫০
পিরোজপুর দক্ষিণ – ১৭৫
চট্টগ্রাম বিভাগ:
———————-
বান্দরবান উত্তর – ১৩০
বান্দরবান দক্ষিণ – ২২০
ব্রাহ্মণবাড়িয়া – ৬৫
চাঁদপুর – ১১০
চট্টগ্রাম উত্তর – ১৮৫
চট্টগ্রাম দক্ষিণ – ২১০
কুমিল্লা উত্তর – ৭৫
কুমিল্লা দক্ষিণ – ৯৫
কক্সবাজার উত্তর – ২৭৫
কক্সবাজার দক্ষিণ – ৩৫০
ফেনী – ১৮৫
খাগড়াছড়ি উত্তর – ৭২
খাগড়াছড়ি দক্ষিণ – ৮২
লক্ষ্মীপুর – ১৬৫
নোয়াখালী উত্তর – ১৯৫
নোয়াখালী দক্ষিণ – ২৫০
রাঙামাটি উত্তর – ৮৫
রাঙামাটি দক্ষিণ – ৯৫
ঢাকা বিভাগ:
———————-
ঢাকা – ৬০
ফরিদপুর – ৬৭
গাজীপুর – ৬৩
গোপালগঞ্জ – ১১০
মাদারীপুর – ৭৩
মানিকগঞ্জ – ৬২
মুন্সীগঞ্জ – ৬৬
নারায়ণগঞ্জ – ৬৩
নরসিংদী – ৬২
রাজবাড়ী – ৬২
শরীয়তপুর – ৮০
টাঙ্গাইল – ৪৮
কিশোরগঞ্জ – ৬৬
ময়মনসিংহ বিভাগ:
————————–
জামালপুর – ৫৩
ময়মনসিংহ উত্তর – ৭৮
ময়মনসিংহ দক্ষিণ – ৫৮
নেত্রকোনা – ৮৫
শেরপুর – ৫৫
খুলনা বিভাগ:
———————-
বাগেরহাট উত্তর – ১৬৫
বাগেরহাট দক্ষিণ – ২৫০
চুয়াডাঙ্গা – ১০৫
যশোর – ১৩০
ঝিনাইদহ – ১০৭
খুলনা উত্তর – ১৬৫
খুলনা দক্ষিণ – ২৭৫
কুষ্টিয়া – ৭৫
মাগুরা – ৮৫
মেহেরপুর – ৯৫
নড়াইল – ৯৫
সাতক্ষীরা উত্তর – ১৮৫
সাতক্ষীরা দক্ষিণ – ২৭৫
রাজশাহী বিভাগ:
————————
বগুড়া – ৪৫
জয়পুরহাট – ৩৫
নওগাঁ – ৪৮
নাটোর – ৪৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জ – ৫২
পাবনা – ৫১
রাজশাহী – ৭০
সিরাজগঞ্জ – ৪৮
রংপুর বিভাগ:
———————-
দিনাজপুর – ৩৫
গাইবান্ধা – ৩৫
কুড়িগ্রাম – ৬২
লালমনিরহাট – ৬৫
নীলফামারী – ৬৮
পঞ্চগড় – ১০০
রংপুর – ৬১
ঠাকুরগাঁও – ৬৫
সিলেট বিভাগ:
———————-
হবিগঞ্জ – ৮০
মৌলভীবাজার – ৮৫
সুনামগঞ্জ – ১২০
সিলেট – ১৩০
*//পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজ্যসমূহ//*
পশ্চিমবঙ্গ:
———————-
উত্তর ২৪ পরগনা – ১৮০
দক্ষিণ ২৪ পরগনা – ৩২৫
দক্ষিণ মধ্য বাংলা – ২০৫
কলকাতা – ২২০
দীঘা – ২৮৫
পশ্চিম মেদিনীপুর – ২৫০
বাঁকুড়া – ১৮৫
পুরুলিয়া – ১৯৮
পূর্ব বর্ধমান – ১৬৫
আসানসোল – ১৬০
বহরমপুর – ৯৫
মালদা – ৪৫
রায়গঞ্জ – ৪৭
ইসলামপুর – ৯৫
শিলিগুড়ি – ১৫০
দার্জিলিং – ১৬০
জলপাইগুড়ি – ১৫৫
কোচবিহার – ১৪০
ওড়িশা:
———————-
উত্তর ওড়িশা – ৩৫০
পূর্ব-মধ্য ওড়িশা – ২৭৫
ঝাড়খণ্ড:
———————-
উত্তর ঝাড়খণ্ড – ১৮৭
দক্ষিণ ঝাড়খণ্ড – ২৩৮
জামশেদপুর – ২২৫
রাঁচি – ২২০
দুমকা – ১১০
বিহার:
———————-
দক্ষিণ বিহার – ৯৬
পূর্ব বিহার – ৫৫
উত্তর বিহার – ৭৫
আসাম:
———————-
পশ্চিম আসাম – ১৩০
মধ্য আসাম – ৭৫
পূর্ব আসাম – ১৪০
দক্ষিণ আসাম – ১২৫
অন্যান্য:
———————-
চেরাপুঞ্জি – ২৫০
মধ্য ত্রিপুরা – ৭৫
ত্রিপুরা-মিজোরাম সীমান্ত – ৬০
মণিপুর – ৮৫
নাগাল্যান্ড – ১০০
উত্তর মিজোরাম – ৫৭
দক্ষিণ মিজোরাম – ৮৫
উত্তর রাখাইন – ৩৫০
বৃষ্টি বলয় নির্ঝরের পূর্বাভাসে যে সকল বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
*এখানে দেওয়া বৃষ্টির পরিমান একটা গড় ধারনা মাত্র, স্থানভেদে এর পরিমান কিছুটা হেরফের হতেপারে। ও দেশের কোন কোন ক্ষুদ্র এলাকায় কিছুটা বেশি বৃষ্টি হতে পারে ও কোন ক্ষুদ্র স্থানে বৃষ্টি অনেক কম হতে পারে।
নোট : প্রাকৃতিক কারনে বৃষ্টি বলয় নির্ঝর এর সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন ও এর শক্তি কিছুটা হ্রাস, বৃদ্ধি বা বিলুপ্ত হতেপারে। এমনকি আপনার এলাকায় টোটালি বৃষ্টি নাও হতে পারে।
পূর্বাভাস তৈরি : Bangladesh Weather Observation Team Ltd. (BWOT)
[Copyright : বাংলাদেশে BWOT একমাত্র আবহাওয়া সংস্থা যারা বৃষ্টি বলয় নামকরন করে বৃষ্টিবলয়ের পূর্বাভাস করার প্রচলন করে। তাই BWOT ব্যাতিত আর কেউ বৃষ্টি বলয় নামকরণ করে পূর্বাভাস করে বিভ্রান্তি তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন]
DISCLAIMER: এটা শুধুমাত্র আমাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য, কোনো সরকারি পূর্বাভাস বা সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি না এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত অফিসিয়াল পূর্বাভাসের জন্য সবাই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করুন।
এবং এই পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করুন, অথবা তাদের পূর্বাভাস অনুসরণ করুন।
ধন্যবাদ : Bangladesh Weather Observation Team Ltd. (BWOT)
আপডেট : ২৭ই জুন ২০২৫, রাত ১১ টা ০০।৷
Advertisements